দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার
ভূমিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আজ আমাদের সামাজিক, জাতীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। অধিকাংশ জনগণ এখানে দারিদ্র্য সীমার মধ্যে বাস করে। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, তেল, ডাল, লবণ, দুধ, চিনি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য । তাইতো কবিতার ভাষায় বলতে হয়—
‘বাড়ছে দাম অবিরাম
চালের ডালের তেলের নুনের/হাড়ির বাড়ির গাড়ির চুনের ।
সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্র ও জনজীবনে দুর্ভোগ: ২০২১-২২ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। ২০২০ সালে তেলজাত সয়াবিন তেল প্রতি কেজির পাইকারি দাম ছিল ৮৮ টাকা, ২০২১ সালে ১১৫ টাকা, ২০২২ সালে ১৮০ টাকা এবং ২০২৩ সালে ১৯৯ টাকা। ২০২০ সালে পামওয়েল ছিল ৬৪.৫ টাকা, ২০২১ সালে ৯০ টাকা, ২০২২ সালে ১৪৯ টাকা এবং ২০২৩ সালে ১৪৫ টাকা ২০২০ সালে মসুর ডাল ছিল ৬৮ টাকা, ২০২১ সালে ৯২ টাকা, ২০২২-এ ১০৮ টাকা এবং ২০২৩ সালে ১১০ টাকা। এভাবে লাগামহীনভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের সর্বশেষ ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ'-এ উঠে এসেছে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা যার মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশই যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। ২০২২-এর এক সংবাদ সূত্র অনুযায়ী বলা হয় গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ছিল দ্রব্যমূল্যের। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ থাকবে বলা হয়েছিল এবং বাংলাদেশের জন্য এটি বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে একজন মানুষের যাবতীয় খরচ যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ৭৯ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় খচর বেড়েছে ৯ টাকা ৭৯ পয়সা। এখন কোনো পরিবারের যদি ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার টাকার বাজার খরচ হয়, তাহলে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২,৯৩৮ টাকায়। প্রতি মাসে খরচ বেড়েছে ২,৯৩৮ টাকা। ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো মাছ, মাংস, দুধ ও ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। এদিকে সরকার ২০২৩ সালে খরচ কমিয়ে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এর থেকে বোঝা যায় চলতি বছরেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলমান থাকতে পারে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের অবস্থা নির্ভরশীল থাকবে। তাই সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।
দৈনন্দিন জীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্র: বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের দ্রব্যমূল্যের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে প্রতিটি পণ্যের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। এর একটি চিত্র ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো :
২০২০ থেকে ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম
| পণ্য | ২০২০ | ২০২২ | ২০২৪ | |
|---|---|---|---|---|
| মোটা চাল | ৩৬.৫০ | ৫০ | ৫৪ | |
| নাজিরশাইল চাল | ৬০ | ৭২ | ৭৮ | |
| আটা (খোলা) | ২৩.৪৫ | ৪৫ | ৪৫ | |
| ময়দা (খোলা) | ৩৩.৫০ | ৫৫ | ৬০ | |
| সয়াবিন তেল (খোলা) | ১০৫ | ১৬০ | ১৫৫ | |
| চিনি | ৬৬.৫০ | ৮৫ | ১৩৫ | |
| মসুর ডাল | ৬৭.৫০ | ১১৯ | ১৩০ | |
| ব্রয়লার মুরগি | ১১৫ | ১৭৫ | ১৭৫ | |
| গরুর মাংস | ৫৫০ | ৬৫০ | ৭৮০ | |
| সুগন্ধি সাবান | ৩৫ | ৪৫ | - | |
| কাপড় কাচার সাবান | ২০ | ২২ | - | |
| টুথপেস্ট | ১২০ | ১৬০ | ১৭০ | |
| এলপি গ্যাস | ৮৯১ | ১১৭৮ | ১৩৬৬ | |
এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনে যে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে তা অবর্ণনীয়। এ অবস্থায় এখন অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মানুষের কাছে বিলাসদ্রব্য কিংবা নিষিদ্ধ বস্তু হিসেবে পরিণত হয়েছে ।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ: আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনো আলোচিত সংবাদ নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের সংবাদে পরিণত হয়েছে। মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতির প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের এই দরিদ্র দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণ ও সূত্র নানাবিধ । নিম্নে কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
উৎপাদন অপ্রতুলতা: বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো উৎপাদন অপ্রতুলতা বা চাহিদার তুলনায় যোগানের অভাব। চাহিদা যেখানে বিশাল সমুদ্রের ন্যায়, সেখানে কূপ খনন করে পানি সরবরাহ চলে না। ফলে সীমাবদ্ধ জিনিসের জন্য অগণিত ক্রেতার ভিড় এবং পরিণামে মূল্যবৃদ্ধি ও জিনিস সংগ্রহের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। আর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষির আধুনিকীকরণে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি: আকস্মিক কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধিতে মজুতদার, মুনাফাখোর, ফটকা কারবারিদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এরা সুযোগ বুঝে হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে গায়েব করে গোপনে মজুত করে। পণ্যের জন্যে হা-হুতাশ শুরু হলে এই সুযোগে তারা দাম বাড়ায় এবং অল্প অল্প করে গোপন মজুত বাজারে ছাড়ে। আবার অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজেট, খরা, বন্যা, হরতাল, ধর্মঘট, পূজাপার্বণ, ইদ, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় ফলে বাজার কখনোই স্থিতিশীল থাকে না।
চোরাকারবার ও চাঁদাবাজি: অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক টাকার লোভে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাচার মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চোরাই পথে বিদেশে পাচার করায় খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়। তেমনি আবার পথে পথে চাঁদাবাজি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এক ট্রাক মালামাল ঢাকায় পৌঁছাতে পুলিশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদা দিতে প্রায় ট্রাক ভাড়ার সমান লেগে যায়। আবার ট্রাকে মালামাল আনা-নেওয়া, মাললোড, আনলোড, খাজনা খরচে অনেক টাকা ব্যয় হয় । ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ৷
মুদ্রাস্ফীতি: বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চাপ যেমন লাগাম টানা যাচ্ছে না তেমনি কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশপাশে আটকে গেছে। এ কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মজুরি সূচক ও মূল্যস্ফীতি প্রায় কাছাকাছি চলে আসছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার মুদ্রা বাজারে ছাড়ে। ফলে সম্পদের তুলনায় টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল নয়। এদেশে ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘট, মারামারি, রাহাজানি, অবরোধ প্রভৃতি কর্মসূচিতে কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিতে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অনেক সময় দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় পণ্যের উৎপাদনস্থল থেকে চাহিদা অঞ্চলে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয় না। শুকনো মৌসুমে খরা এবং বর্ষার সময় প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকে না। ফসল উৎপাদন কম হওয়ার ফলে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।
কর বৃদ্ধি: অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন চালাতে গিয়ে সরকারকে জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপাতে হয়। সে কর প্রত্যক্ষ হোক কিংবা ভ্যাটের আকারে হোক তার ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পরিকল্পিত অর্থনীতি রূপায়ণ করতে গেলেই দ্রব্যমূল্য অনিবার্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
জনজীবনে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবন আজ সংকটের সম্মুখীন। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে দ্রব্যমূল্যের প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ দিশেহারা হয়ে এ সব জিনিস জোগাড়ের চেষ্টা করে। ধনী লোকের গায়ে আঁচড়টিও পড়ে না, পদে পদে মার খায় দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, অল্পবেতনভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিজীবীরা। কিন্তু এরাই তো সমাজের বৃহত্তর অংশ। জীবন ও জীবিকার তাড়নায় মানুষগুলো এমনিতেই বিভ্রান্ত। তার ওপর এই বাড়তি উপদ্রবে পরিবার ও সমাজের শান্তি নষ্ট হয়। দেখা দেয় অসন্তোষ, বিক্ষোভ এবং নানারকমের সমাজবিরোধী কার্যক্রমের অভ্যাস। জিনিসের দাম বাড়লেও হাতে টাকা থাকার জন্য মানুষ বাধ্য হয় অসদুপায়ের আশ্রয় নিতে। ফলে সামাজিক কাঠামোতেই ভাঙন শুরু হয়। এর প্রভাবে জনসাধারণের দুঃখ-দারিদ্র্য বেড়ে যায়, তার পরিণামে দুঃখ থেকে পরিত্রাণের জন্য নানা নেতিবাচক প্রয়াসে তারা লিপ্ত হয় এবং সামাজিক আবহাওয়া সামগ্রিকভাবে দূষিত হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে কতিপয় সুযোগসন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে সমাজের অবক্ষয় ঘটায়।
সাধারণ মানুষের জীবনধারণের খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে নেমে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মান, কমছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান। এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। শিশুরা উপযুক্ত যত্ন, পুষ্টির অভাবে ভোগে। আর্থিক সংকটের ফলে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শোচনীয় অভাব আর দুঃসহ দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানুষ হয় মরিয়া। সমাজের বুকে সঞ্চারিত হয় বিক্ষোভের উত্তাপ। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জাতীয় সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে রাখা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু তা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। দ্রব্যের মূল্য একবার বেড়ে গেলে তা কমানো খুবই কঠিন। তাই মূল্য যাতে না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। দ্রব্যমূল্য কমানো বা স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সরকারকে অভ্যন্তরীণ কঠোর নীতি ও আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধের জন্য নানা উপায় বর্তমান। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে করণীয় দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো :
i. উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
ii. জনসংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করে সমবণ্টনের মাধ্যমে চাহিদা নিবারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
iii. মজুতদার ও ফটকাবাজদের জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। যাতে করে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে।
iv. পণ্যমূল্য নির্ধারণ ও বাজার তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে।
v. কৃষি ভর্তুকি বৃদ্ধি করে কৃষকদের উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উৎপাদন বাড়লে বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হবে।
vi. চাঁদাবাজ ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে আইন প্রণয়ন করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
vii. ব্যবসায়ীরা যাতে ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকার একটি নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত করবে। .
viii. প্রতিটি ক্রয়বিক্রয় কেন্দ্রে দ্রব্যমূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে।
ix. কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ভালো বীজ ও কীটনাশক সার সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
x. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যাতে সহজে পণ্যসামগ্রী একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে চাহিদা পূরণ করতে সহজ হয়।
xi. সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে বিলাসিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে হবে।
xii. একচেটিয়া বাজারকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করতে হবে।
xiii. প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে।
xiv. এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, চোরাকারবার, মজুতদারি ইত্যাদি ব্যাপারে সজাগ থাকলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবনে এক দুষ্টগ্রহ । ক্রমাগত পণ্যমূল্য বৃদ্ধি জনজীবনে অসন্তোষ, ক্রোধ ও বিদ্বেষ পুঞ্জীভূত করে। এতে দেশের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তাই প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের মতো দরিদ্র দেশের জন্য অতীব প্রয়োজন । যে সমস্ত কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তা প্রতিরোধ করলেই আমরা দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পাব। তাই একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি প্রতিরোধকল্পে আমাদের সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।


0 Comments