লিখিত পরীক্ষার বৈতরণি পার হওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষা করে চূড়ান্ত ধাপ ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা এটি কেবল জ্ঞান যাচাইয়ের পরীক্ষা নয়, বরং আপনার ব্যক্তিত্ব, মানসিক দৃঢ়তা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং যোগাযোগ দক্ষতারও পরীক্ষা। অনেক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফল করেও ভাইভায় আশানুরূপ ফল করতে না পারায় চূড়ান্ত তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে। ফলে ভাইভার গুরুত্ব অপরিসীম।
মৌলিক বিষয়
ভাইভার প্রস্তুতি শুরু করার আগে আপনাকে কিছু মৌলিক বিষয় জেনে নিতে হবে —
• নিজেকে জানুন: আপনার নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আপনার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিজ জেলা, পরিবার সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য এবং সেগুলোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সাধারণ তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে রাখুন।
• সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলি: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। বিশেষ করে সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এসব বিষয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
নিজ ক্যাডার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়
আপনি যে ক্যাডারগুলো পছন্দের তালিকায় রেখেছেন, সেগুলোর কাজ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন। কেন আপনি এই ক্যাডারটি বা পদটি পছন্দ করেন, তা যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করার প্রস্তুতি রাখুন
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
• নিজ জেলা: আপনার জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিখ্যাত ব্যক্তি, সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন। আপনার জেলার নামকরণের ইতিহাস বা কোনো বিশেষ স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে।
• শিক্ষাগত বিষয়: আপনার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। আপনার পঠিত বিষয়ের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডারের কাজের বা সংশ্লিষ্ট পদের কী সম্পর্ক, তা বোঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে।
• মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানের মূলনীতি, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ এবং সংশোধনীগুলোর বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিন।
• সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: দৈনন্দিন জীবনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এসব বিষয়ে মৌলিক ধারণা থাকা উচিত।
মৌখিক অনুশীলন (মক ভাইভা) অভিজ্ঞ বিসিএস ক্যাডার বা শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত মক ভাইভাগুলোতে অংশ নিন। এতে আপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত হবে এবং আপনি সেগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
নেতিবাচকতা পরিহার: কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে অযথা আন্দাজে কিছু বলবেন না। বিনীতভাবে বলুন যে আপনার জানা নেই। মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা তর্ক করা থেকে বিরত থাকুন।
ইতিবাচক মনোভাব: চাপের মুখে শান্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি । বোর্ড সদস্যরা আপনার মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতাও যাচাই করবেন।
যোগাযোগে দক্ষতা: স্পষ্ট ভাষায়, গুছিয়ে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলুন আঞ্চলিকতা পরিহার করে প্রমিত বাংলায় কথা বলার অভ্যাস করুন।
টিপস
• নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন: এই বিষয়গুলো বিসিএস সিলেবাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিসিএস ভাইভায় এগুলোর সংজ্ঞা, গুরুত্ব এবং বাস্তবায়নে আপনার ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে।
• প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিন
• মানসিক চাপ কমাতে পরীক্ষার আগ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
• হাসিখুশি ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করুন।
• চাকরির ভাইভায় ভালো করার জন্য গুছিয়ে প্রস্তুতির বিকল্প নেই। সফলতা পেতে হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে
• নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়তে হবে। তাহলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক আলোচিত বিষয়গুলো জানা যাবে ভাইভা আপনার স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপ সুচিন্তিত প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে এ ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। [সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)


0 Comments